মঙ্গলবারের অমঙ্গল : অষ্ট প্রহর
অমঙ্গলের পূর্বাংশ
সব রাগ আর হতাশা জেরে ফেলে দিলাম, কিন্তু ওমা নিয়তির এই জায়গায় থামার কোনো ইচ্ছাই ছিল না ! তার অট্টহাসি যেন সে সিন্দুকে ভরে রেখেছে, একটার পর একটা উপহাস আমার জন্য সে বের করতেছে।
গিয়ে দেখি ব্যাংকে কারেন্ট নেই, 😒। বলেন এটা কোন কথা? কেমনে সম্ভব ! একটা ব্যাংকে কারেন্ট নাই ! একটা এসি চলতেছে কিন্তু পিসি গুলোতে কোন লাইন নেই ! বাইরে তাকিয়ে দেখি বিদ্যুতের লাইন তো সব জায়গায় সচল ! ভৌতিক ব্যাপার ! আমাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলল। দুই থেকে তিন মিনিট বসে থাকার পর শুনি ওদের নাকি একটা মিটারের ব্যালেন্স শেষ। ভালো কথা রিচার্জ করুন। কিন্তু কেমনে করবে ! পিসিতে তো লাইন নেই, 😤। আমি খুব বদ মেজাজী রাগ সহজে কন্ট্রোল করতে পারি না, ওই দিন মনে হয় সব নিয়তির দোষ মেনে নিয়ে চলতেছিলাম। ওদেরকে বললাম বিকাশ করেন, কোন উত্তর দিল না 🙃, উনাদের মুখে আমি পড়ে ফেলেছি ঢাকা ব্যাংক দিয়ে বিদ্যুতের বিল দেওয়া গেলে কেন তারা ব্র্যাক ব্যাংক ব্যবহার করবে। মাথার মধ্যে খালি একটা জিনিসই ঘুরতেছিল কন্ট্রোল, কন্ট্রোল, কন্ট্রোল 😑😤
তো এখন নাকি জেনারেটর ছাড়বে, পিসিতে লাইন দিবে, তারপরে বিদ্যুতের বিল দিয়ে আমাদের মত মানুষের ব্যাপারে চিন্তা করবে। ভালো কথা দুই মিনিট হয়ে গেল, তিন মিনিট হয়ে গেল, জেনারেটর চালু হয় না, জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? বলতেছে জেনারেটর নষ্ট, 🌚। বললাম ভাই বিকাশ করেন, না হলে আমি করে দিই টাকা দিয়ে দিয়েন, কেউ পাত্তাই দিল না, অবশেষে দুই-তিন মিনিট পরে ক্যাশ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে গিয়ে মিটার রিচার্জ করল, বিদ্যুৎ আসলো, 😴। কাউন্টারের সামনে কোনো লাইন নেই, সেই আমি আবার খুশি, যাক এখন আর প্যারা নাই। কিন্তু কে জানত নিয়তির খেলা এখনো বাকি, 🙄, টাকা গুনে দেখে দুই-তিনটা টাকাতে একটু কালি লাগানো বলল এগুলো চেঞ্জ করে দিতে হবে। একেতো সময় নাই, চারটায় ব্যাঙ্ক অফ হয়ে যাবে, তার-উপরে আজকে লাস্ট ডেট। ছেঁড়াফাটা নোট নেয়া হয় এইটা বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে কিন্তু আমার সামান্য কালি লাগা নোট নিবেনা অথচ সব নাম্বার সব স্পষ্ট।
আবার আরেকটা আপু 😐, ওই যে বললাম আমি বাস্তববাদী তাকে জ্ঞান দিয়ে আমার লাভ হবে না এটা আমার বুঝা বাকি নেই। ছুটলাম আবার বাজারের রাস্তায়, কাদা মাড়িয়ে, ইসলামী ব্যাংকে; নোট চেঞ্জ করে দিতে বলার সাথে সাথেই আপু নোটগুলো চেঞ্জ করে দিয়েছে। দিন শেষে তো তিনিও মানুষ, একটা মানুষকে আর কত টর্চার করবে, 😅। ব্যাংক বন্ধ হতে চলল, সময় আছে আর দশ থেকে পনের মিনিট, দৌড়ে গিয়ে টাকাটা দিলাম, কাগজপত্র সব দিলাম। আপু দুই মিনিট ধরে কম্পিউটারে কি জানি করতেছে বললাম হচ্ছে না? তার মুখ দেখে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। তাও ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
তিনি বললেন সার্ভার কাজ করতেছে না, 🙂। এখন আর রাগ উঠতেছে না, নিজের উপর অনেক হাসি পাচ্ছে, অনেক কষ্টে অট্ট হাসি কন্ট্রোল করেছি, না হলে পাগল উপাধি নিয়ে বাসায় ফিরতে হত। জিজ্ঞেস করে জানলাম বাজারের মাঝখানে নাকি একটা ব্র্যাক ব্যাংক আছে, ওখানে ও টাকা দেয়া যাবে,
দৌড়ে গেলাম। চারটা বাজতে দশ মিনিট বাকি, ওমা গিয়ে দেখি ব্যাংক বন্ধ, 👀।
নিচের বসে থাকা দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম বন্ধ কেন? উনি বললো বৃষ্টি এত, মাত্র তিনজন আসছিল তার মধ্যে দুইজন মহিলা, একজন দারোয়ান। মানুষ ও বেশি ছিল না, তাই এক ঘণ্টা আগেই বন্ধ করে দিছে। মানে বুঝেন একটা ব্যাংক এক ঘন্টা আগে কেমনে বন্ধ করে,! বুঝতেছিনা দোষটা কার? ওদের, না আমার কপালের, না নিয়তি মজা নিচ্ছে ! বুঝে গেলাম আজকে আর টাকা দেওয়া হবে না, মেনেও নিয়েছি। ওই যে বললাম বারবার, আমি বাস্তববাদী শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করিনা। সুন্দর মত ঢাকা ব্যাংকে গেলাম প্রমাণস্বরূপ একটা ছবি তুলে নিলাম যাতে ওইটা রেজিস্ট্রার অফিসে মেইল করতে পারি এতে আমার আরেকদিন এক্সট্রা টাইম নিতে সুবিধা হবে।
ভাবলাম বেকারি থেকে কিছু কিনি, গিয়ে শুনি কারিগর আসে নাই। একটাতেও রুটি আর কেক ছাড়া কিছু নেই। এখন আর যাই হোক খারাপ লাগে না, মনে মনে এটাও ধরে নিয়েছি বাসায় ঢোকার আগে অন্তত একবার হলেও স্লিপ কেটে মাটিতে পরবো, 😅। খুব সচেতন হয়ে হাটতে ছিলাম ওভারব্রিজ পার হয়ে ও পাশে গেলাম, ভাবলাম কিছুই যখন পেলাম না কিছু খ্যাতাপুরি নিয়ে যাই।আমিনবাজারের ফেমাস পুরী।
ওই যে বললাম বাজারের গলির রাস্তা হাঁটা ছাড়া উপায় নেই, দোকানটা একটু দূরে অবশ্য, তেমন ও না যদি আপনি আমার মত অলস না হয়ে থাকেন, মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটার দূরত্ব। হাসি দিয়েন না, যাওয়ার পরে আবার পাঁচ মিনিট দাঁড়ায় থাকতে হবে সিরিয়াল ধরে পুরি নেওয়ার জন্য, তারপরে আবার পাঁচ মিনিট হেঁটে আসতে হয়। সব মাথায় রয়েছে, এই বৃষ্টির মধ্যে তাও গেলাম ।
কি আর হবে যা ভাবতেছেন তাই, 🙃। মামা আজকে পুরি বানায় নাই, কেন? জানিনা, দোকান খোলাই আছে, ওই যে বললাম সব নিয়তির পরিহাস, 😐। মেনে নিয়েছি সবই, কিছু মনে না নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্ট্যান্ড এ চলে আসলাম। বৃষ্টি হচ্ছে এক কাপ চা না খেলেই নয়, অবশেষে একটু শান্তি লাগছে চায়ে চুমুক দিয়ে। চা খাওয়া শেষ ভালই লাগতেছে, আরেকটা চা নিলাম, খাওয়া শেষ। গাড়িতে উঠে বাসায় চলে যাব, এই দোকান থেকে দুই মিনিট হাঁটলেই স্ট্যান্ডে গাড়ি। বুঝতেছিনা কিভাবে আর বলব, নিয়তির খেলা মনে হচ্ছে শেষই হচ্ছে না ! ছাতার বাটন লক হয়ে গেছে, কোনো মতেই খুলতেছে না, 😒। দোকানে থাকা ছোট্ট ছেলেটি বলল ভাই আমারে দেন, দেখি কি হইছে, দিলাম, নিমেষেই খুলে দিল। বাটন অবশ্য ঠিক হয়নি, তবে কাজ তো হচ্ছে, এটাই অনেক আজকের দিনে। সেই একমাত্র আমাকে একটু স্বস্তি দিয়েছে মজার দুইকাপ চা আর ছাতা খুলে দিয়েছে, ওই দিনে ওই সময়ে এই উপকারটুকু আমার কাছে অনেক কিছু, 🤝। স্মৃতি হিসেবে তার একটি ছবি তুলতে চাইলাম,
সে কিছুটা লাজুক, চেহারা দেখিয়ে ছবি তুলতে চাইল না। এই দিনে এমন উপকারী মানুষের সাথে তার ইচ্ছার বাইরে আবদার করার সাহসটা আমার হয়ে উঠল না। মনে হচ্ছে ভালোই করেছি, 😇। বারবার আসার সময় মনে হচ্ছিল এই বুঝি স্লিপ খেলাম, বুঝলাম না স্লিপ না খাওয়া ছাড়াই গাড়িতে উঠে পড়লাম, 🥴।
আগেই বলে রাখি একটা দিনে বাঁচার জন্য আমার অক্সিজেন আর এক চুমুক কোকাকোলা লাগবেই লাগবে 😅, অন্য কোন বিকল্প নেই। বাসার সামনের দোকানে গেলাম একটা কোকাকোলা নিলাম, মনে হচ্ছিল এত সহজে কেমনে? আজকে যে কপাল, ঘাপলা আবার কেমনে না থাকে? যা ভেবেছি ঠিক তাই! কোকাকোলার দেখি ডেট ফেল, 🙃। বলল ভাইয়া স্প্রাইট, সেভেন আপ, মোজো আছে ওইগুলা দেই? আমি ভাই সত্যিকারি প্রেমিক 😛, অন্য কিছুতে আমার চলবে না, গাড়িতে আসার সময় আশেপাশের দোকানগুলো যে বন্ধ এটা আমার খেয়াল করা আছে। কি আর বলব স্থানীয় এলাকার মানুষ বৃষ্টির দিনে কষ্ট করে এসে দোকান খুলবে না বিকালে, অবশ্য এটা আমার পোড়া কপালের সাথে সম্পর্কিত নয় 🤣,পুরান ঢাকার মানুষ এমনই। ভাবলাম রাতে খাবো, কি আসে যায়। মনে হচ্ছিল স্লিপ কেটে এই বুঝি পড়লাম, কিন্তু নিয়তির উপহাস মনে হয় আজকে এ পর্যন্তই ছিল, 😴। ছোট ভাই রাতে কোকাকোলা ও নিয়ে এসেছে, 🤩।খুশিমনে এই কাহিনীটা পোস্ট করে মুভি বা কিছু একটা দেখে ঘুমিয়ে যাবো ভাবতেছিলাম, কিন্তু মঙ্গলবারের অমঙ্গল এখনো বাকি, 👀। সেই ওয়াইফাই লাইন যে গেল আসতে আসতে বৃহস্পতিবার, 🙂।
এ যেন কল্পকার, নিয়তির আধার;
একটাই ভয় আমার,
এই দিন যেন পাইনা আবার।
Hi @darthhelios, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON